ঢাকা,শনিবার, ১৮ মে ২০২৪

আদালতের নির্দেশে থানায় মামলা

চকরিয়ায় মোবাইল চুরির অভিযোগে কিশোরকে অমানবিক নির্যাতন

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া ::
কক্সবাজারের চকরিয়ায় বসতবাড়ির মোবাইল ফোন চুরির অভিযোগে রাস্তা থেকে ধরে নিয়ে সাকিব আল হাসান (১৭) নামের কিশোরকে সাতঘন্টা আটকে রেখে অমানবিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। পরে খবর পেয়ে এলাকাবাসির সহায়তায় পরিবার সদস্যরা ওই কিশোরকে মুর্মুষ অবস্থায় উদ্ধার করে চকরিয়া উপজেলা সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করেছে। উপজেলার পুর্ববড় ভেওলা ইউনিয়নের বানিয়ারচর মাদরাসা থেকে শুরু হয়ে পশ্চিম সিকদারপাড়া এলাকায় ঘটেছে এ ঘটনা।
এ ঘটনায় ভিকটিম কিশোরের মাতা পুর্ববড় ভেওলা ইউনিয়নের বেতুয়া মুবিনপাড়ার ছৈয়দ আহমদের স্ত্রী কমরু বেগম (৪৭) বাদি হয়ে চকরিয়া উপজেলা সিনিয়র জুড়িসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে চারজনকে আসামি করে একটি ফৌজদারি অভিযোগ জমা দেন। পরে আদালতের বিজ্ঞ বিচারক মো.জাহিদ হোসাইন তিনদিনের মধ্যে বাদির ফৌজদারি অভিযোগটি (নং ৯৮৭/২২) মামলা হিসেবে রেকর্ড করতে চকরিয়া থানার ওসিকে নির্দেশ দেন।
সর্বশেষ ২১ জুলাই চকরিয়া থানা পুলিশ বাদি কমরু বেগমের নালিশী অভিযোগটি আদালতের নির্দেশে মামলা হিসেবে রুজু করেন। যার মামলা (নং ৩৩/২২)। এতে এজাহারনামীয় আসামিরা হলেন পুর্ববড় ভেওলা ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড পশ্চিম সিকদারপাড়ার মহিবুল্লাহর ছেলে নুরুল্লাহ, আতাউল্লাহ , মোজাহের আহমদের ছেলে অলি উল্লাহ ও আবদুল্লাহ।
মামলার এজাহারে বাদি কমরু বেগম বলেন, পারিবারিক অভাব অনটরে কারণে তাঁর ছেলে সাকিব আল হাসান এলাকায় টমটম গাড়ির চালিয়ে পরিবারের জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। ঘটনার দিন ১৫ জুলাই রাত আনুমানিক এগারটার দিকে গাড়ি চালিয়ে বাড়ি ফেরার পথে বানিয়ারচর মাদরাসা এলাকায় পৌঁছলে অভিযুক্ত আসামিরা তাঁর ছেলে সাকিবকে মোবাইল চুরির অভিযোগ তুলে গাড়ি থেকে নামিয়ে ধরে নিয়ে যায়। এরপর রাত ১১টা থেকে ১৬ জুলাই ভোর ছয়টা পর্যন্ত আসামিদের বাড়ির উঠানে রশি দিয়ে বেঁেধ আমার কিশোর ছেলেকে নির্দয়ভাবে প্রহার করে আসামিরা।
বাদি কমরু বেগম বলেন, ফজরের আযানের পর খবর পেয়ে প্রতিবেশি লোকজনের সহায়তায় আমার পরিবার সদস্যরা আসামিদের বাড়ির উঠানে গিয়ে মুর্মুষ অবস্থায় আমার ছেলেকে উদ্ধার করে চকরিয়া উপজেলা সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করে। ঘটনার সময় তাঁরা আমার ছেলেকে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথায় ও শরীরের বিভিন্ন অংশে জখম করে। বেধম প্রহারের সময় তাঁর পকেটে থাকা গাড়ির ইনকামের ১২শত টাকা, ১৫ হাজার টাকা দামের একটি মোবাইল ফোন সেট কেড়ে নেয়।
বাদির অভিযোগ, আসামিরা এলাকায় দাপটশালী। কেউ তাদের বিচার করেনা, সেই কারণে আমার ছেলেকে সাতঘন্টা বেঁেধ রেখে অমানবিক নির্যাতন করলেও এলাকার জনপ্রতিনিধি কিংবা সমাজপতি কারো কাছে বিচার পাইনি। তাই বাধ্য হয়ে আদালতের আশ্রয় নিয়েছি। বাদি কমরু বেগম অভিযোগ করে বলেন, মামলা রুজু হবার পর থেকে আসামিরা নানাভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। আমার পরিবারকে দেখে নেবে বলে শাসাচ্ছে। এমনকি তাঁরা সাজানো ঘটনা দেখিয়ে পত্রিকায় ভিত্তিহীন খবর ছাপিয়ে আমার পরিবারকে হয়রাণির চেষ্ঠা করছে। আমি মিথ্যা খবরের প্রতিবাদ করছি। এখন তাঁরা আমার পরিবারের বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা করার জন্য থানা পুলিশকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করছে। আমি প্রশাসনের কাছে সহযোগিতা চাই।
মামলা নেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চকরিয়া থানার ওসি (তদন্ত) মো.জুয়েল ইসলাম। তিনি বলেন, বাদির ফৌজদারি অভিযোগটি আমলে নিয়ে বিজ্ঞ আদালত মামলা নিতে চকরিয়া থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন। সেই আলোকে মামলাটি রুজু করা হয়েছে। এখন পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মাতামুহুরী পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের একজন উপ-পরিদর্শককে (এসআই) তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

পাঠকের মতামত: